সেন্টমার্টিন প্রবালদ্বীপ, টেকনাফঃ
টেকনাফ উপজেলা হতে ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন প্রবালদ্বীপ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ১৯৮৩ সালে ইউনিয়ন হিসেবে উন্নীত হয়। আট কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সেন্টমার্টিনের দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার আর প্রস্থ দুই কিলোমিটার। পূর্বে এর নাম ছিল নারিকেল জিনজিরা। ৭ম-৮ম শতাব্দীতে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরব বণিকরা জাহাজযোগে আকিয়াব ও রেঙ্গুন যাতায়াতের সময় এ দ্বীপে সাময়িক বিশ্রাম নিতেন। আরবি শব্দ জাজিরা অর্থ দ্বীপ। এ দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে। প্রায় ত্রিশ হাজার নারিকেল গাছ রয়েছে বলে এলাকাবাসীরা প্রচার করে থাকেন। তবে ১৯৯১, ১৯৯৪ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে উপর্যুপরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রচুর নারিকেল গাছ ক্ষতিসাধন
ঘূর্ণিঝড়োত্তর এলাকার লোকজন সেন্টমার্টিনের পর্যটন ও পর্যটকদের স্বার্থে প্রচুর নারিকেল চারা রোপন করে। সেন্টমার্টিন নামে এলাকাটি বহুল প্রচার হলেও সরকারি কাগজপত্র, রেকর্ডপত্র, মানচিত্র ও দলিল দস্তাবেজে নারিকেল জিনজিরা লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে একটি লাইট হাউস রয়েছে যা গভীর সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজ, নৌকা ও নাবিকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। সেন্টমার্টিন নামে জনৈক ধর্মযাজক জাহাজযোগে এ দ্বীপে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। তাঁর নামানুসারে এলাকাটি নামকরণ বলে মনে করা হয়। একদা টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যেতে হতো কাঠের নৌকা কিংবা রেসকিউ বোটের মাধ্যমে। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের দিকে পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (BIWTC) টেকনাফ হতে সমুদ্র পথে ‘খিজির-৩’ নামে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি সী ট্রাক চালু করে। ইদানিং এরূপ ব্যক্তিমালিকানায় অনেক সী-ট্রাক আছে যা দিয়ে পর্যটকরা অনায়াসে প্রবাল দ্বীপ বেরিয়ে আসতে পারেন। কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, এলসিটি কুতুবদিয়া, সী-ট্রাক, কাজল, সোনারগাঁ নামে ছয়টি জাহাজযোগে পর্যটকরা টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপে যাতায়াত করছেন। আড়াই ঘন্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিনে পৌঁছা যায়। বর্ষা মৌসুমে কোন অবস্থাতে এ দ্বীপে যাওয়া নিরাপদ নয়। পর্যটন মৌসুমেও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে সেন্টমার্টিন যাওয়া উত্তম। চারদিকে নীল জলরাশি পরিবেষ্টিত ও নীল আকাশ সমৃদ্ধ সেন্টমার্টিন দ্বীপটি বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিকট এক অপূর্ব সুন্দরী পর্যটন এলাকা হিসেবে দিনে দিনে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পর্যটকদের আবাসনের জন্য কক্সবাজার জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত রেস্টহাউজ ছাড়াও ইদানিং অনেক ব্যক্তি মালিকানাধীন রিসোর্ট রয়েছে। জোস্নার রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করার মজাই আলাদা। সমুদ্রের কুল ঘেঁষে নির্মিত কটেজ সমূহের জানালার স্বচ্ছ কাঁচ থেকে সাগরের তালমাতাল ঢেউ সহজে অবলোকন করা যায়। পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সী-বীচের ন্যায় সেন্টমার্টিন বীচ থেকেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS