অগ্গমেধা ক্যাং, কক্সবাজারঃ
ম্রাউক-উ দ্বিতীয় স্বর্ণালী যুগের অষ্টম আরাকানরাজ থিরি থুধম্মা’র ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে রানী নেংসাংমে’র প্ররোচনায় তার প্রেমিক সুযোগ সন্ধানী লেঃ ম্রাধি পতি নারাপতি ঘ্রীঃ (ঙাকুছালা) নামে একজন আরাকান মন্ত্রী কৌশলে সিংহাসন দখল করেন। সিংহাসনে আরোহন করার পর থেকে তিনি রাজ পরিবারের সদস্যসহ রাজ বংশধরদের হত্যা শুরু করেন। তখনকার সময় আরাকানে বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য দেখা দিলে থিরি থুধম্মা’র পুত্র ঙা থ্যেং খাইন আরাকান হতে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় বন জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। রাজ পরিবারের জীবিত সদস্যসহ তাঁদের বংশধর এবং অনুগত আরাকানের অধিবাসীগণ তৎকালীন চট্টগ্রামের কেন্থা (বর্তমান কর্ণফুলী নদী) নামক স্থানে আশ্রয় নিয়ে তথায় বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আরাকান রাজ সভার প্রধান পরামর্শক ও রাজকুমার জ্ঞানী মন্ত্রী ঙা লাৎ রুং এর নেতৃত্বে প্রায় পঞ্চাশ হাজার সৈন্য আরাকান ছেড়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন। কালক্রমে উক্ত মন্ত্রী বৌদ্ধ ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেঅগ্গামেধাবী নাম ধারণ করে এ জনপদ গড়ে তোলেন। তিনি আশিটি রাখাইন পরিবারকে নিয়ে বাঘোলী (বর্তমান বাঁকখালী নদী) নদীর সন্নিকটে এক ছোট পাহাড়ের পাশে বটবৃক্ষের নীচে আশ্রয় নেন এবং তথায় অং খ্যেং থা/অং শেং থা গ্রাম পত্তন করে জনবসতি স্থাপন করে। ‘অং’ অর্থ সাফল্য ‘খ্যেং’ অর্থ প্রশান্তি আর ‘থা’ অর্থ সমৃদ্ধি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অগ্গামেধাবী ভিক্ষু কর্তৃক সৃজিত অং খ্যেং থা জনপদই কক্সবাজারের আদি নাম। তিনি ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করে অগ্গমেধাবী নাম ধারণ করে কক্সবাজার জনপদ গড়ে তোলে অগ্গমেধা ক্যাং প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন অগ্গামেধা ক্যাংটি অবশ্যই কাঁচা ঘর জাতীয় কুঁড়ে ঘর ছিল। সংগত কারণে বলা যায় যে, ষোল শতকের দিকে বর্তমান কক্সবাজার জনপদটি আবাস অযোগ্য একটি এলাকা ছিল। এলাকাটিকে প্রতিকুল পরিবেশে হিংস্র শ্বাপদসংকুল গহীন অরণ্য ভূমিকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হয় অগ্গমেধাবী’র নেতৃত্বে। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আরাকানের স্যানদোয়ে শহরের ধর্মীয় পুরোহিত উ লাবা ভান্তে’র তত্ত্বাবধানে এ ক্যাংটি পুনঃ নির্মাণ করা হয়। এ ক্যাং পুনঃ নির্মাণকালে মায়ানমার থেকে কারিগর ও কাঠ সামগ্রী জাহাজযোগে কক্সবাজারে আনা হয়। ঐতিহাসিক অগ্গমেধা ক্যাংটি সকলের নিকট বড় ক্যাং নামেও পরিচিত। মনোরম পরিবেশে অবস্থিত মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য কাঠে তৈরী অগ্গামেধা ক্যাং বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। পরবর্তীতে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ‘অং শেং থা’ গ্রামকে নতুন পর্যায়ে একটি উপনিবেশ করে তোলেন। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এর আচার আচরণ, ব্যবহার ও তাঁর বিরাট অবদানের কারণে ক্যাপ্টেন কক্স মৃত্যুর পর এলাকাবাসী তাঁর সম্মানার্থে এলাকার আদি নাম ‘অং শেং থা’ (শাব্দিক অর্থ সমৃদ্ধিময় শান্তি নগর) পরিত্যাগ করে ফালংশেই-ম্রো নামে
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান
নতুন নামকরণ করেন। রাখাইন ভাষায় ‘ফালং’ অর্থ অফিসার। কক্স সাহেবের নামেই আজ পর্যটন নগরী কক্সবাজার এর নামকরণ। কক্সবাজার নামের সাথে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর নামানুসারে কক্সবাজার আউটার ষ্টেডিয়ামের জায়গায় একটি অংশে মিউজিয়াম নির্মাণ করা হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস